ভাল চাকরির জন্যই টিইপি
টেস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং পিপলস বা সংক্ষেপে টিইপি সলিউশন একটি সফটওয়ার টেস্টিং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। যেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে কম্পিউটারের উপর চমৎকার কারিগরি দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব। বাংলাদেশের সিলেট, নিউজার্সির প্যাটারসন, নিউইয়র্কের ব্রঞ্চ এবং ভার্জিনিয়াতে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের চারটি শাখা। গত ১৫ বছরে এসব শাখা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পাঁচ শতাধিক প্রশিক্ষণার্থী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন। পুরোপুরি বাংলাদেশি মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে দু’জন বাঙালী প্রশিক্ষক। এর একজন প্রতিষ্ঠানের সিইও নজরুল ইসলাম কোয়েল এবং উপদেষ্টা রোহেল আহমেদ। কোয়েল নিউইয়র্কের ব্রুকলিন কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ব্যাচেলর এবং জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে আইটি প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স শেষ করে এখন ফেডারেল গভর্ণমেন্টের চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। আর রোহেল আহমেদ মন্টক্লেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাবসা প্রশাসনে (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম কনসেনট্রেশন) স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে ফেডারেল সরকারের অধীনে চাকরি করছেন। তারা, বিশেষ করে বাংলাদেশি কমিউনিটির ছেলে-মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উপর বিশেষভাবে জোর দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি টিইপির এই দুই স্বপ্নদ্রষ্টার মুখোমুখি হয় জনপ্রিয় সাপ্তাহিক নতুন সকাল।
আলাপের শুরুতেই তারা যা বললেন তা ছিল এরকম ‘আমরা ছেলে-মেয়েদের পারফর্ম্যান্স টেস্টিং ও সফটওয়্যার টেস্টিং শেখাই। একই সঙ্গে যারা কোর্স করেন, তাদেরকে চাকরিতে ইন্টারভিউয়ের জন্য তৈরি করি। এছাড়াও বেসিক কম্পিউটার অপারেশন এবং বেসিক কম্পিউটার প্রোগ্রামও আমরা তাদেরকে শিখিয়ে থাকি।
টিইপি সলিউশনের কোর্সটি কেন করব- এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুই কর্ণধর বলেন কোর্সটি করলে আপনি কম্পিউটারের উপর চমৎকার কারিগরি দক্ষতা অর্জন করবেন। সেইসঙ্গে পাবেন আইএসটিকিউবি সার্টিফাইড টেস্টার এ্যাডভান্সড লেভেলের প্রয়োজনীয় সব ধরণের সাপোর্ট। এছাড়া আমাদের ইন হাউস ট্রেনিং ডিভিশনও রয়েছে। যার মাধ্যমে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর ব্যক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নে নিবিড়ভাবে সাহায্য করা হয়। ক্যারিয়ার ডেভেলাপমেন্টের জন্য প্রচুর সুযোগ রয়েছে। বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের জন্য আমাদের আলাদা প্রশিক্ষক রয়েছে। এই কোর্সটি সফলভাবে সম্পন্ন করলে উচ্চ পারিশ্রমিকে কাজ করার নিশ্চয়তাতো রয়েছেই।
প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর কি ধরণের জব করছে আপনাদের ছাত্র-ছাত্রীরা ?
আমাদের এখানে কোর্স করে ছাত্র-ছাত্রীরা সফটওয়্যার টেস্টার, বিজনেস এ্যানালিস্ট ইত্যাদি পজিশনে কাজ করছেন। বর্তমানে আমাদের কিছু কিছু ছাত্র-ছাত্রী সিস্টেম এ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং গুগলে এ্যান্ড্রয়েড ডেভেলাপার হিসেবেও কাজ করছেন। সফট্ওয়্যার টেস্টিং কোর্সটি করলে আসলে কাজের অনেক ক্ষেত্র আপনার সামনে খুলে যাবে।
কোর্স শেষে আপনারা কিভাবে চাকরি পাবার ক্ষেত্রে সহায়তা করেন?
কোর্স শেষ হবার পর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য এক সপ্তাহের প্রিপারেটরি ক্লাস করানো হয়। আবার ছাত্র-ছাত্রীদের পারফর্ম্যান্সের ওপর নির্ভর করে ট্রেনিংয়ের ব্যাপ্তিকালও বাড়ানো হয়। এর আগে ইন্টারভিউয়ের প্রতিটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। তাছাড়া, বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আমাদের নেটওয়ার্ক রয়েছে। যখনই ছাত্র-ছাত্রীরা তৈরী বলে মনে করি আমরা তখন ওই কোম্পানিগুলোতে ইন্টারভিউয়ের জন্য পাঠাই। এভাবে অনেক ছাত্র-ছাত্রী গুগল, সাটার স্টক, ডিলজিক, কেপিএমজি, এল থ্রি, এক্সেনটিওর, ওয়েলস্ ফারগো, এইচপিসহ আরোও অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।
বাংলাদেশ বা বাঙালী ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
আমাদের বাংলাদেশি ছেলে-মেয়েরা অনেক বুদ্ধিমান এবং মেধাসম্পন্ন। আমাদের অনেক বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী আছেন যারা উচ্চ শিক্ষিত। কিন্তু বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে মুদি দোকান কিংবা ফাস্ট ফুড-রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন। পারিবারিক প্রয়োজন রক্ষা করাটা তাদের জন্য খুবই জরুরি এবং একই সঙ্গে কঠিন। অনেক সময় দেখা যায় তারা কাজের কারণে বিষয়ের গভীরে মনোসংযোগ করতে কিংবা সঠিকভাবে উপস্থিত হতে পারেন না। বাংলাদেশ কিংবা অন্যান্য দেশ যেমন কানাডা, লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া থেকে যারা স্থানান্তরিত হয়ে এদেশে আসছেন তারাও যেন সুন্দর একটি ক্যারিয়ার গড়তে পারেন সেজন্য আমরা কাজ করছি। তাদেরকে সাহায্য করাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশে অবস্থানকালীন কিংবা এদেশে আসার আগেই যদি তারা সফট্ওয়্যার টেস্টিংয়ের ধারণাটি আয়ত্ত্ব করতে পারেন তাহলে এখানে আসার পর আমরা তাকে পরবর্তী সহায়তাগুলো প্রদান করবো। এটাই হলো আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
আর কোনো পরিকল্পনা?
আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত কি ঘটছে তা সবাইকে জানাতে এবং জানতে হবে। গত গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময়ে প্যাটারসনে আমরা ১২ বৎসর এবং ততুর্ধো বয়সীদের জন্যে ফ্রিতে জাভা বুট ক্যাম্প কোর্সটি করিয়েছি। নারীদের জন্য বেসিক কম্পিউটার কোর্স শুরু করতে যাচ্ছি। আমাদের আশেপাশে যারা উচ্চ শিক্ষিত লোকজন রয়েছেন তাদেরকে সঠিক পথনির্দেশনা দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অদুর ভবিস্যতে আমাদের আরোও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।
ছাত্র-ছাত্রীরা কিভাবে আপনাদের কোর্সগুলোতে উপস্থিত হতে পারেন?
আগেই বলেছি নিউ ইয়র্ক, নিউজার্সি, ভার্জিনিয়াতে আমাদের শাখাসমূহ রয়েছে। এই লোকেশনগুলোতে যারা থাকেন তারা সরাসরি ক্লাস করতে পারেন। আবার তারা নিজ নিজ বাসা থেকে অনলাইনেও ক্লাস করতে পারেন। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকেই আমাদের ক্লাসে এ্যাটেন্ড করা সম্ভব।
ঢাকা নিয়ে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা নেই ?
অবশ্যই আছে! ঢাকায় আমরা একটি শাখা খোলার প্রস্তুতি নিয়েছি। খুব শিগগিরই এর কার্যক্রম শুরু করা হবে। কারণ, বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় যারা আইটি এক্সপার্ট রয়েছেন তারা যদি আমাদের এই কোর্সটি করে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তাহলে খুব সহজেই ভাল বেতনের চাকরি পেতে পারেন।